পশ্চিমবঙ্গের একটি বিখ্যাত আম। এছাড়া বাংলাদেশের মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলাতেও এই আমের চাষ হয়। এ...
কোল্ড প্রেস সরিষার তেলের উপকারিতা ও কেন খাবেন?
সরিষার তেল আমাদের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। বিভিন্ন ভাজির সাথে সাথে ভর্তা, মুড়ি মাখা এবং আচার তৈরি করতে সরিষার তেলের কোন বিকল্প নেই। আমরা অনেকেই এই তেল গ্রহণ করলেও এর পুষ্টিগুণ এবং ঘানিতে ভাঙ্গানো তেলের গুণগত মান সম্পর্কে তেমন অবগত নই। আমাদের এই লেখায় আমরা কোল্ড প্রেস সরিষার তেল সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাগ করবো।
কোল্ড প্রেস সরিষার তেল কেন খাবেন?
সরিষার তেল আমাদের দেশের এক অন্যতম জনপ্রিয় তেলের নাম। বাংলাদেশে সরিষার ফুল যেমন সৌন্দর্য নিয়ে আসে তেমনি সরিষা থেকে তৈরি করা তেল খাবার সুস্বাদু করে। অনেক যুগ আগে থেকেই বাঙালির খাবার রান্না সহ ভর্তা তৈরি করার জন্য সরিষার তেলের প্রচলন আছে। বিশেষত তেল বলতে আমাদের পূর্বপুরুষগণ সরিষার তেলকেই বুঝে থাকে। যাইহোক, বর্তমান যুগে বাজারে নানান রকমের তেল পাওয়া গেলেও গায়ে মাখা এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায় এমন সহজ লোভ্য তেল আর দ্বিতীয়টি নেই। এই কারণে সরিষার তেলের চাহিদা এত বছর ধরে প্রচলিত আছে।
সাধারণত সরিষার তেলের এত জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ। বিশেষ করে ঘানিতে ভাঙ্গানো সরিষার তেল খাঁটি এবং সব থেকে বেশি পুষ্টিকর। বর্তমান সময়ে সরিষা থেকে তেল তৈরি করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ইলেকট্রিক ঘানি ব্যবহার করা হয়। এতে উচ্চ চাপ এবং তাপে সরিষা থেকে তেল নিঃসরণ করা হয়। প্রক্রিয়াটি অনেক সহজসাধ্য এবং যান্ত্রিক হলেও এর থেকে তৈরি করা তেল গুণগত মানের দিক থেকে অনেক নিম্ন পর্যায়ের হয়।
অন্যদিকে এর স্বাদ একদম ভালো হয় না এবং দেখতে অনেকটা ইঞ্জিনের ব্যবহার করা লুব্রিকেন্ট বা মবিলের মত দেখা যায়। অন্যদিকে কম তাপে অর্থাৎ কোল্ড প্রেস পদ্ধতিতে কাঠের ঘানি দিয়ে তেল তৈরি করা হল আদর্শ পদ্ধতি। কারণ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি করা তেল পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও খাঁটি হয়। তাছাড়া তেলের স্বাদ এবং রং একদম টপ ক্লাস হয়। এখানে কোল্ড প্রেস পদ্ধতি বলতে কাঠের ঘানির মাধ্যমে ধীরে ধীরে কম তাপে তেল নিঃসরণ করাকে বুঝায়।
মোটকথা, সরিষার তেল খাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল এর স্বাদ উপভোগ করা এবং শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি করে। কিন্তু ইলেকট্রিক ঘানি ব্যবহার করে যে সরিষার তেল তৈরি করা হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু হয় না। এই কারণে কোল্ড প্রেস বা কাঠের ঘানিতে তৈরি করা সরিষার তেলের চাহিদা সব থেকে বেশি। অন্যদিকে এই তেল পুষ্টিগুণ সম্পন্ন যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
কোল্ড প্রেস সরিষার তেলের উপকারিতা
সরিষার তেলের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এখানে বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বলা হয়েছে যা আমাদের এই তেল নিয়মিত খাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নেওয়া আবশ্যক।
শারীরিক ব্যথা কমায়
সরিষার তেলে থাকা খনিজ উপাদান হাড়ের গঠন নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাংস পেশির সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। এতে শরীর ব্যথা কমে যায় এবং সুস্থ থাকা সম্ভব হয়।
ক্যানসার প্রতিরোধী
সরিষার তেলে ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান আছে। বিশেষ করে ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে এই তেল অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ঠান্ডা দূর করে
প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা দূর করার জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে শীতকালে খাবারের পাশাপাশি ত্বকে মাখলে তা বাইরের ঠান্ডা থেকে দেহকে রক্ষা করে এবং একটি উষ্ণ ভাব বজায় রাখে। অন্যদিকে সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে ঘানিতে ভাঙ্গানো খাঁটি সরিষার তেলের কোনো বিকল্প নেই।
হার্ট ভালো রাখে
সরিষার তেলে যথেষ্ট পরিমাণ চর্বি থাকে। এই কারণে কখনোই এই তেল অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। কারণ বেশি বেশি খেলে তা কোলেস্টেরল দূর করার পরিবর্তে রক্তে এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। এই কারণে হার্টের সমস্যা হতে পারে। বিপরিতদিকে পরিমাণ মত সরিষার তেল হার্ট সুস্থ রাখতে অনেক ভালো ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে এতে থাকা উপাদান এলডিএল কোলেস্টেরল দূর করে হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে।
সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে
সরিষার তেল একটি শক্তিশালী অতি বেগুনি রশ্মি প্রতিরোধক। অর্থাৎ নিয়মিত সরিষার তেল ত্বকে মাখলে তা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করে। এই কারণে কেমিক্যাল মিশ্রিত ক্রিমের থেকে সরিষার তেল অনেক স্বাস্থ্যকর।
শরীর চাঙ্গা রাখে
ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল দ্রুত হজমে সহায়তা করে এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং মাংস পেশি সচল রাখে। এতে দেহ ক্লান্তি অনুভব করে না এবং দীর্ঘ সময় উদ্দীপ্ত ও চঞ্চল থাকতে পারে।
চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে
সাধারণত চুলের যত্নের কথা আসলে আমরা হয় নারিকেল তেল না হয় অলিভ অয়েলের কথা বলে। তবে সরিষার তেল জুলের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অনেক কার্যকরী। বিশেষ করে চুলের গোঁড়া মজবুত করা এবং চুল উজ্জ্বল করার জন্য এই তেলের কোন জুড়ি নেই।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
স্বাভাবিক রক্ত চলাচল একটি দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোল্ড প্রেস সরিষার তেল শরীরে মাখলে তা রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধা দেয় এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। অন্যদিকে রক্তে থাকা শর্করার পরিমাণ কমিয়ে ব্লাড সার্কুলেশন স্বাভাবিক রাখে।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ
সরিষার তেলে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে কোল্ড প্রেস সরিষার তেল দেহে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান বৃদ্ধি করে যা এই ধরনের সম্ভাব্য সমস্যা ঘটার আগেই নির্মূল করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
কোল্ড প্রেস সরিষার নিয়মিত খাবার এবং ত্বকে ব্যবহার করলে তা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে ব্রেইনের জন্য বিভিন্ন উপকারী খনিজ উপাদান এই তেল থেকে পাওয়া যায়।
মাইগ্রেনের কষ্ট কমায়
ম্যাগনেসিয়াম খনিজ পদার্থ মাইগ্রেন সমস্যার জন্য অনেক উপকারী। কোল্ড প্রেস সরিষার তেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। এতে নিয়মিত সরিষার তেল খেলে এবং ত্বকে ব্যবহার করলে তা দেহের ম্যাগনেসিয়াম তারতম্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাইগ্রেনের সমস্যা উপশম করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
অতিরিক্ত ওজন সুষম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কারণ শরীরে যখন অতিরিক্ত ওজন থাকে তখন উক্ত দেহে নানা রকমের রোগ বাসা বাঁধে। তাছার চর্বি আমাদের দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাঁধা সৃষ্টি করে।
ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্য যেমন নানা ধরনের ব্যায়াম করা প্রয়োজন তেমনি পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। সরিষার তেল ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক কার্যকর। এতে আছে ওমেগা -৩, ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যা অস্বাস্থ্যকর চর্বি দূর করে এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তে করে।
রান্নার কাজে ছাড়াও সরিষার তেলের পুষ্টিগুন ও অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের অনেকেই অজানা। যার বিস্তারিত আমাদের অনেক আর্টিকেলে দেয়া হয়েছে।
ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল কিভাবে উৎপাদন করে?
ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল উৎপাদন করা অনেক সনাতনী পদ্ধতি। কারণ বর্তমান সময়ে ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহার করে অল্প সময়ে এবং অল্প পরিশ্রমে অনেক বেশি সরিষার তেল উৎপাদন করা যায়। তবে সঠিক পদ্ধতিতে ঘানি ভাঙ্গা তেল উৎপাদন করতে হলে কিছু পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। তো প্রথমে সরিষা শুকিয়ে সুন্দর করে প্রসেস করে নিতে হবে। তারপর সেগুলো ওজন করে পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নিতে হবে।
এরপর সেগুলো পিষে নেওয়ার জন্য ঘানিতে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত প্রায় সকল ধরনের শক্তিশালী কাঠ দিয়েই ঘানি তৈরি করা যায়। তবে তেঁতুল কাঠের তৈরি ঘানি সব থেকে উচ্চ মানের তেল উৎপাদন করতে ব্যবহার করা হয়।ঘানিতে সরিষার দানা নিয়ে যাওয়ার পর সেগুলো ঘানির মধ্যে দিয়ে গরুর সাহায্যে ঘানির হাতল ধীর গতিতে ঘুরানো হয়। কারণ যদি উচ্চ গতিতে ঘুরানো হয় তাহলে তা অনেক বেশি তাপ সৃষ্টি করবে যা তেলের গুণগত মান নষ্ট করবে। অন্যদিকে কোল্ড প্রেস পদ্ধতির উলঙ্ঘন হবে।
যাইহোক, এভাবে ধীরে ধীরে হাতল ঘুরানোর কারণে সরিষার দানা ধীরে ধীরে পিষতে থাকবে এবং তা থেকে একটু একটু করে রস বের হতে থাকবে। পরবর্তীতে সেই রস ফিলটার করে তা থেকে তেল আলাদা করে তা বাজারজাত করা হবে।